How do you know what your skin type is ? – in bengali
কিভাবে বুঝবেন আপনার ত্বক কি রকমের ?

আপনার ত্বক কি ধরনের জানার সহজ উপায় হল, সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোবার আগে এক টুকরো টিসু পেপার নিয়ে নাকের দু’পাশে, গালে, থুতনিতে এবং কপালে চেপে ধরবেন, ঘষবেন না। দেখবেন, ত্বকের ছাপ পড়েছে, যদি টিসু পেপারে হালকা তৈলাক্ত ভাব থাকে তবে বুঝবেন আপনার ত্বক স্বাভাবিক।
স্বাভাবিক ত্বক আদর্শ ত্বক। ত্বক মসৃণ আর সজীব থাকে বলে এই জাতীয় ত্বকে লোমকূপগুলো দেখাই যায় না। ভিজে বা তেলতেলেও থাকে না। নাক, কপাল বেশ উজ্জ্বল হয়। গলার কাছে বা চোখের কোলে তেলা ভাব থাকে না। একেবারে বাচ্চাদের বা সদ্য যৌবন প্রাপ্ত মেয়েদের ত্বক এ রকম থাকে।
টিসু পেপারে যদি তেলের ছাপ বেশি থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক তৈলাক্ত। তৈলাক্ত ত্বক সর্বদা এত তেলতেলে দেখায় যে দেখলেই বোঝা যায়। এ ধরণের ত্বকেব্রণ, কালো দাগ বেশি হয়। এই ধরণের ত্বকের ওপর বয়সের ছাপ কম পড়ে। গরম কালে ত্বক সবচেয়ে বেশি তেলা হয়। মেকাপ নেবার পর তৈলাক্ত ত্বক তাড়াতাড়ি তেলা হয়ে যায়।
শুষ্ক ত্বকটিসু পেপারে প্রায় তেলের ভাব থাকে না। শরীরে জলের অভাব হলে কিংবা ঘর্ম গ্রন্থি থেকে ঠিকমত তেল নিঃসৃত না হলে ত্বক শুকনো হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকে বলিরেখা পড়ে বয়সের ছাপ আগেই এসে যায়। এই ত্বক পাতলা ধরণের হয়। শুষ্ক ত্বক প্রায়শই ফেটে যায়, খড়ি ওঠে। মারমাস-এর মত খোসা ওঠে। শীতকালে শুষ্ক ত্বক আরও শুকনো আর ফাটা ফাটা লাগে।

মিশ্র ত্বক
অনেক মেয়ের মিশ্র ত্বক থাকে। শরীরের মুখের অংশে যেমন কপালে, নাকে বা চিবুকে তৈলাক্ত ভাব থাকলেও বাকী অংশ শুকনো থাকে।
ত্বকের পরিচর্যা
ত্বকের পরিচর্যার শুরুতে কতকগুলি সাধারণ নিয়ম অবশ্যই পালনীয়। সুন্দর ত্বকের জন্য এগুলি দরকার।
আহাব – হজমের গণ্ডগোলে ত্বকের স্বাস্থ্য খারাপ হয়। পেট পরিষ্কার এবং হজম ভাল হলে শরীরের চামড়া টান টান সজীব হয়ে উঠবে। প্রোটিন, শাকসবজি, ফল, কার্বোহাইড্রেট খাবার ত্বকের সজীবতার জন্য আবশ্যক।
জল – ত্বকের যত্নের ও ময়লা দূর করার জন্য জলের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ গ্লাস জল খাওয়া প্রয়োজন। শরীরের ভেতরটা পরিষ্কার রাখতে, ঘর্ম গ্রন্থির সুষ্ঠু কাজে জলের প্রয়োজন। সৌন্দর্যের চাবিকাঠিটি রয়েছে জলের মধ্যে। গরম জল এবং ঠাণ্ডা জল দুটোই ব্যবহার করা ভালো স্নানের সময়। গরম জলে লোমকূপের বন্ধ দরজা খুলে যায়। ঠাণ্ডা জলে রক্ত চলাচল দ্রুত হয়। এইভাবে পর্যায়ক্রমে দুটি জলের ব্যবহার করা ভাল।

পরিচ্ছন্নতা – ত্বকের স্বাস্থ্য পুরোপুরি নির্ভর করে ত্বককে যতটা সম্ভব নির্মল, পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর। শরীরে ধুলো, অপরিচ্ছন্ন চুল, নখের নীচে ময়লা, ত্বকের পক্ষে মারাত্মক। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পোষাক-আশাক পরিষ্কার এবং নিয়মিত পালটাতে হবে। প্রধানত অর্ন্তবাস-এর ময়লা ত্বকের নানান রোগের প্রধান কারণ। চিরুনি, তোয়ালে, জুতো-নিত্য ব্যবহার্য বস্তুগুলি নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত।
নিদ্রা – মেয়েদের নানাভাবে ঘরে বাইরে ব্যস্ত থাকতে হয়। ক্লান্তি আর পরিশ্রমে ত্বকের জন্য বিশ্রাম চাই। রোজ অন্তত পক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুম না হলে ত্বকের স্বাভাবিকতানষ্ট হয়ে যায়।
বোদ-হাওয়া – ত্বকের বিকাশের ও সতেজ পেলবতার জন্য, বাইরের নির্মল হাওয়া আর বোদের প্রয়োজন। না হলে ত্বকের রং বিবর্ণ হয়ে যায়।
ব্যায়াম – দেহের জন্য যেমন ব্যায়াম প্রয়োজন, ত্বকের যত্নের জন্যও ব্যায়ামের আবশ্যক। সমস্ত রকমের সৌন্দর্য-চর্চার উপকরণ ব্যবহার করলেও, ত্বককে সজীব, মসৃণ করতে বিধি সম্মত ব্যায়ামের অবশ্য প্রয়োজন।

বিভিন্ন ধরণের ত্বকের পরিচর্যার পদ্ধতিও আলাদা। মোটামুটি কতকগুলো নিয়ম সমস্ত ধরণের ত্বকের জন্য প্রযোজ্য। সারা দিনের মধ্যে খুব অল্প সময় ধরে এই পরিচর্যার প্রয়োজন।
১। ক্লিনজিং-পরিষ্কার করা
২। ফ্রেশনিং-সতেজ করা
৩। ময়শ্চারিং-আর্দ্র করা
৪। কন্ডিশানিং-পুষ্টি সথার
৫। স্টিমুলেটিং-উদ্দীপ্ত
৬। একসফোলিয়েটিং-শুষ্ক মাস পরিষ্কার করা
স্বাভাবিক ত্বকের যত্ন
ত্বক স্বাভাবিক হলে সমস্যাও অনেক কম হয়। ত্বকের যত্ন না হলে অবহেলায় ত্বকের স্বাস্থ্য হানি ঘটে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ক্লিনজিং – ১। গায়ে মাখা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন। বেসনও ব্যবহার করতে পারেন। ২/৩ চামচ বেসন গুলে সারাগায়ে মেখে পরে জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
২। প্রথমে অল্প গরম জলের ঝাপটা দিয়ে শরীর ধুয়ে তারপর ঠাণ্ডা জলে স্নান করুন।
৩। মুখ হালকা গরম জল দিয়ে মুছে ঠাণ্ডা জলের গা-সহা ঝাপটা দিন।
৪। দিনে অন্তত ৫/৬ বার মুখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দেবেন। এতে ত্বকের পরিচ্ছন্নতা ছাড়াও শরীর ঝরঝরে লাগে।

৫। জল ছাড়া মাঝে মাঝে প্রচলিত কোম্পানীর ক্লিনজিং মিল্ক বা ক্লিনজিং লোশন দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করবেন। ক্লিনজিং মিল্ক ব্যবহারে ত্বকের ময়লা উঠে আসে। হালকা ভাবে তুলো বুলিয়ে নেবেন।
৬। মুখের ত্বক পরিষ্কার করার পর ফ্রেশনার বা স্কিন টনিক লাগাতে পারেন। অথবা ঘরোয়া রূপটানে আলু থেঁতো, শশার চাকা, পাতিলেবুর রস প্রভৃতিতেও ভালো কাজ হয়।
৭। পরিষ্কার করা মুখে ময়শ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করবেন।
৮। সপ্তাহে একদিন হালকা গরম জলে নুন দিয়ে তোয়ালে ভিজিয়ে আলতো করে ঘষে মুখে, কানের পাশে, ঘাড়ে, গলার মরা চামড়া ভাল করে তুলে দিন। যেদিন এভাবে করবেন সেদিন আর ময়শ্চারিং লোশন ব্যবহারের প্রয়োজন নাই।
৯| সপ্তাহে একদিন অন্ততঃ মুখে গরম জলের ভাপ দেবেন। হালকা গরম জলে কয়েক খানা তুলসী পাতা দিয়ে নেমেই ঘামলার জলের কাছাকাছি মুখ নিয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে নেবেন দেখবেন মুখেই যেন শুধু ভাপ লাগে। ভাপ নেওয়া ভাল, এতে লোমকূপের নোংরা পরিষ্কার হয়ে, ব্রণ হওয়া কমে যায়। পাঁচ মিনিটের বেশি ভাপ নেওয়ার দরকার নেই।
১০। যাদের ত্বক স্বাভাবিক তারা সপ্তাহে দু’দিন ফেস-প্যাক লাগাবেন। বাড়িতে নানা রকম ফেস-প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন যেমন ডিমের কুসুম আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে মেখে পরে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে নেবেন। ফেস-প্যাক-এর ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
১১। রাত্রে শুতে যাবার সময় যে কোন ঋতুতে মুখ, হাত, পা ভাল করে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে ক্রীম মাখবেন।
১২। মেকাপ করার আগে এস্ট্রিনজেন্ট লোশন লাগানো ভালো।

মিশ্র ত্বকের যত্ন
মিশ্র ত্বকে মুখমণ্ডলের কিছু অংশ বেশি তেলা হয়। সেজন্যে এই জাতীয় ত্বকে কোন অংশ কি রকম তা বুঝে তবেই পরিচর্যা করা ভালো।
মোটামুটি স্বাভাবিক ত্বকের মতই যত্ন নিন। তবে যে অংশগুলো বেশি তৈলাক্ত সেখানেমাঝে মাঝে এস্ট্রিনজেন্ট লোশন লাগিয়ে নিতে পারেন।
তৈলাক্ত অংশে ডিমের সাদা অংশ এবং বাকি অংশে ডিমের কুসুম ও অলিভ অয়েলের ঘরোয়া ফেস-প্যাক ব্যবহার করুন, এটা উপকারী।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
তৈলাক্ত ত্বক আসলে স্বাস্থ্যকর ত্বক। এই ত্বকে বয়সের ছাপ সহজে বোঝা যায় না। সর্বদাই তেলতেলে থাকে বলে মেক-আপের অসুবিধে হয় তবে মুখ পরিষ্কার না রাখলে ব্রণ দেখা দেয়। কাজেই রোজ দু’বেলাই ত্বকের পরিচর্যা করবেন।
১। সারাদিনে যত বেশিবার সম্ভব মুখ ধোওয়া ভাল।
২। মুখে চন্দন বা লেবুযুক্ত সাবানের ফেনা ভাল করে মাখিয়ে নেবেন।প্রথমে হালকা গরম জলে পরে ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নেবেন বা বেসন দিয়ে মুখ পরিষ্কার করাও ভাল। ক্লিনজিং মিল্ক ভাল করে মালিশ করে তুলো বা টিসু পেপার দিয়ে মুছে নেবেন।
৩। গ্রীষ্মকালে রোজ দু’বার করে এস্ট্রিনজেন্ট লোশান লাগাবেন। এতে শরীরেরবাড়তি তেল রোধ হয়। ঘরোয়া পদ্ধতিতে আলু বেঁতো, শশা, পাতিলেবুর রস। সকালের দিকে লাগাতে পারেন। প্রভৃতি
৪। রোজ একবার ভাল ময়শ্চারিং লোশান গলায়, ঘাড়ে, মুখে মাখুন।
৫। সপ্তাহে তিনদিন মুখে ফেস-প্যাক লাগান। ডিমের সাদা অংশ ভাল করে ফেটিয়ে নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে কুড়ি মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। চোখের ওপর ভিজে তুলো চাপা দিয়ে রাখুন যাতে চোখের কোণে এই মিশ্রণ না লাগে। পরে জলের ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৬। সপ্তাহে অন্ততঃ ১ বার গরম জলের ভাপ নিন।

শুষ্ক ত্বকের যত্ন
শুষ্ক ত্বক পাতলা ধরনের হয় সেইজন্য তাড়াতাড়ি বলিরেখা পড়ে, কুঁচকে যায়। এই জাতীয় ত্বকের যত্ন নিতে হয় খুব সাবধানে।
১। সকালে, সন্ধ্যায়, রাত্রে মুখ ভাল করে ধোবেন। একবার উষ্ণ গরম জলে পরে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দেবেন।
২। ময়শ্চারিং লোশান লাগিয়ে ভাল করে তুলো দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
৩। ফ্রেশনিং করার জন্য রোজ ভাল কোম্পানীর স্কিন টনিক বা লোশান ব্যবহার করবেন। নরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিন। আলু থেঁতো বা শসা দিয়ে ফ্রেশনিং করলে চামড়ার ঔজ্জ্বল্য বাড়ে।
৪। ডিমের কুসুমের সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে সপ্তাহে তিন দিন ফেস-প্যাক নেবেন। আধঘন্টা চিত হয়ে শুয়ে থাকবেন মাস্ক নিয়ে। তারপরে ঠাণ্ডা জলে মুখ ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
৫। মাসে দু’বার ভাপ নেবেন। গরম জলে তুলসী পাতা দিয়ে।